নিজস্ব প্রতিবেদক : মারাত্মক পুঁজি সংকটে ভুগছেন কুষ্টিয়ার চামড়া ব্যবসায়ীরা। ঢাকা ও সাভারের ট্যানারী মালিকদের কাছে এখানকার ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩০ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া পাওনা পড়ে রয়েছে। বছরের পর বছর এই বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া পড়ে থাকায় এখানকার চামড়া ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তবে পুঁজি সংকট থাকলেও কুষ্টিয়ার চামড়া ব্যবসায়ীরা এবারের কোরবানীর ঈদে কাঙ্খিত চামড়া
সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার প্রত্যাশা করছেন। চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সারা দেশের মধ্যে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও কুষ্টিয়া জেলার পশুর চামড়ার কদর সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে কুষ্টিয়ার ব্লাক বেঙ্গল গোট’র চামড়া পৃথিবী বিখ্যাত। রাজধানী ঢাকা ও সাভারের ট্যানারী মালিকরা দেশের সিংহভাগ চামড়া এই তিন জেলার চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। কুষ্টিয়া শহরের বারর আলী গেট এলাকায় চামড়া ব্যবসায়ীদের আড়ত রয়েছে। সরেজমিনে আড়তে গিয়ে দেখা যায় ভেতরে এবং পেছনের দিকে রেলের পাশে সব জায়গায় চামড়ার বিশাল স্তুপ। শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন লবণ লাগিয়ে চামড়া সাজিয়ে রাখতে। ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ টাকা এবং গরুর চামড়া ৪০
টাকা বর্গফুট হিসেবে ক্রয় করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। কুষ্টিয়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনিস কোরাইশী জানান,
করোনা মহামারীর কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পশু কোরবানীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই এবারের কোরবানী ঈদকে টার্গেট করে জেলায় প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ ছাগলের চামড়া এবং দেড় লক্ষ গরুর চামড়া সংগ্রহের টার্গেট হাতে নিয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এর বাইরেও ৪ থেকে ৫ হাজার মহিষ এবং ভেড়ার চামড়াও সংগ্রহ করা হবে। কোরবানীর ঈদ গত হওয়ার তিন-চার দিনের মধ্যেই এখানকার চামড়া ব্যবসায়ীরা প্রায় এক লক্ষ ছাগলের চামড়া এবং প্রায় ৩০ হাজার গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছেন। লকডাউনের কারণে চামড়া সংগ্রহ অভিযান অনেকটায় ব্যাহত হচ্ছে
বলে জানিয়ে চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির এই নেতা আশা প্রকাশ করেন লক ডাউন শেষ হলে এক মাসের মধ্যেই তাঁরা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কুষ্টিয়া ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদই, মাগুরা, রাজবাড়ী, যশোর, ফরিদপুরসহ আশে-পাশের জেলা থেকে কুষ্টিয়ার চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন।
চামড়া ব্যবসায়ী হানিফ কোরাইশী জানান, ট্যানারিতে বকেয়া পড়ে থাকায়
কুষ্টিয়ার চামড়া ব্যবসায়ীরা মারাত্মক পুঁজিসংকটে পড়েছেন। এখানকার
ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা পড়েছে রাজধানী ঢাকা ও
সাভারের ট্যানারী মালিকদের কাছে। পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ঈদের আগে এখানকার ব্যবসায়ীরা ঢাকায় ট্যানারী মালিকদের কাছে ধর্ণা দিয়েও একটি টাকাও পাননি। খালি হাতে কুষ্টিয়া ফিরেছেন। ঢাকার হেমায়েতপুরের ক্রিসেন্ট ট্যানারী মালিকের কাছে কুষ্টিয়ার এক মাসুদ মিয়ারই ৬ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা পড়ে রয়েছে। মহাজনের কাছ থেকে পাওনা টাকা তুলতে না পেরে চরম অর্থ সংকট নিয়েই ধার-দেনা করে নগদ টাকা দিয়েই চামড়া সংগ্রহ করছেন কুষ্টিয়ার চামড়া ব্যবসায়ীরা।
ঢাকার ট্যানারি মালিকেরা ব্যবসায়ীদেরকে বকেয়ার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা দিয়ে ধার শোধ করার প্রস্তাব দিচ্ছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী গোলাম সিদ্দিক জানান, পুঁজি সংকট, করোনা মহামারীসহ নানা সংকট থাকলেও চলতি কোরবানীর ঈদে কুষ্টিয়ার চামড়া ব্যবসায়ীরা আশানুরুপ চামড়া সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কাছে বছরের পর বছর পড়ে থাকা বকেয়া পাওনা পরিশোধ হলে এখানকার ব্যবসায়ীরা আরো ভালো ব্যবসা করতে পারত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কুষ্টিয়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনিস কোরাইশী বলেন,
ঢাকার ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর বকেয়া পড়ে থাকা পাওনা কোটি কোটি টাকা পরিশোধ করছেনা। অন্যদিকে সরকার জেলা পর্যায়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের কোন প্রণোদনা বা অনুদানও দিচ্ছে না। যে কারণে জেলা পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা মারাত্মক পুঁজি সংকটে ভুগছেন। তিনি কুষ্টিয়ার চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা টাকা পরিশোধসহ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করারও দাবি জানান।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post