এখন কি হবে? করোনার সংক্রমণ রোধের নাম করে একের পর এক দেওয়া হলো লক ডাউন। এতে সংক্রমণ ও মৃত্যুরহার কমেনি। তবে এই চক্করে পড়ে যা কমেছে তা হলো সাধারণ মানুষের আয় রোজগার ও রাষ্ট্রীয় তহবীলের টাকা।
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল ৫ আগস্টের আগে লকডাউন উঠবেনা। অসুবিধা হলেও নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষায় ছিল প্রায় সবাই। এর মধ্যে এমন কি হলো যে ১ তারিখে রপ্তানীমূখী সব শিল্প খুলে দিতে হবে। ৫ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করলে কি এমন ক্ষতি হতো? মাসের পর মাস বন্ধ রেখে কিছুই হলোনা। আর ৪ দিনের তর সইলোনা। এর চেয়ে বড় তুগলগী কান্ড আর কি হতে পারে?
তাহলে কি টাকার কাছে হেরে গেল মানবতা। রাস্তায় রপ্তানী শিল্পের শ্রমিকদের ঢল। হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে চাকুরি বাঁচাতে ঢাকার দিকে আসছে। তাদের চোখে-মুখে আতঙ্ক। গণপরিবহন বন্ধ রেখে কারখানা খোলার ঘোষকদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বৈকি।
গার্মেন্টস মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা পেয়েছেন। সবগুলো ব্যাংক তাদের জন্য দরজা খুলে রাখে। বিশাল অংকের কর্মসংস্থান তাদের কল্যাণে হয়েছে। সবটুকু নিংড়ে দিয়ে যেসব শ্রমিকরা ঘড়ির কাটায় কারখানায় যায় এবং আসে। অন্যার্য মজুরীর টাকায় কোন রকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কিই বা তারা পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রাষ্ট্র কি তাহলে ব্যবসায়ীদের কাছে আত্মসমর্পন করেছে।
সবগুলো হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট। আইসিইউর বিছানা খালি নেই। একখানা সিট পাবার আশায় অধির আগ্রহে এক রোগীর স্বজনরা অন্যের মৃত্যুর অপেক্ষায় আছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া রোগীগুলো জমের সঙ্গে লড়ছেন। মা তার জীবনকে বিসর্জন দিয়ে নিজের আইসিইউ বিছানা ছেড়ে দিচ্ছেন ছেলের জন্য।
ঢাকার সবগুলো হাসপাতালের সামনে রোগী নিয়ে স্বজনদের আহাজারী। তাদের চোখের সামনে শ্বাস নিতে না পেরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন করোনা রোগীরা। সন্তান বাঁচাতে পারছে না পিতা-মাতাকে। স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে শেষবারের মতো বুকভরে শ্বাস নেওয়ার আক্ষেপ নিয়ে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছেন স্বামী। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মানুষ। বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন শ্রমিক। গার্মেন্টস মালিকসহ টাকাওয়ালা ব্যবসায়ীরা একবার ফিরেও তাকাচ্ছেন না।
বিশ্বের অনেক দেশের শিল্পপতি, সেলিব্রেটিরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা্ করেছেন। দু’হাত ভরে অর্থ সম্পদ নিয়ে অহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানুষ বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তারা। আর আমরা চলছি তার উল্টোপথে।
করোনায় পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম, এস আলম গ্রুপের মোরশেদুল আলম, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল, মোনেম গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মোনেম খান, ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান, ন্যাশনাল কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. কামরুল হুসেন চৌধুরী (গোর্কি), ইস্ট ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ, রহমত গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ মোহাম্মদ আলী সরকার, এনএফকে টেক্সটাইলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানসহ ৩৩জন শিল্পপতি প্রাণ হারিয়েছেন।
করোনায় প্রাণ হারানো শিল্পপতিরা জাগতিক সব সম্পদ রেখে পরপারে চলে গেছেন। এখন যারা ৪ দিনের দেরি সহ্য করতে পারলেন না তারাও এক সময় ওই সব শিল্পপতিদের মত চলে যাবেন। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা টাকা-পয়সা সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবেননা। তাদের হঠকারিতায় ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। এসব মানুষের দীর্ঘ শ্বাস অভিশাপ হয়ে কখন যে কার ঘাড়ে উঠবে তা কেবল সময়ই বলতে পারে। কম্পিউটার টিপা নিরেট সাংবাদিকদের জন্য সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর কি-ই-বা করার আছে।
—- দৈনিক দেশতথ্যের পাঠকদের জন্য লেখাটি পাঠিয়েছেন সাংবাদিক আবু বকর। লেখাটি সম্পাদনা করেছেন দৈনিক দেশতথ্যের ঢাকা অফিসের রাণী বিন্ধুবাসিনী।
এবি/দেশতথ্য ডেস্ক/০১ আগস্ট/২০২১

Discussion about this post