নবম শ্রেণির এক ছাত্রী বলেন স্কুল নদীগর্ভে চলে গেলে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে। অভিভাবকরা আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে। আমরা আরো লেখা পড়া করতে চাই।
চিলমারী উপজেলার দক্ষিন খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজ। এটি ব্রম্মপুত্রের চর এলাকার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মূল ভবন চলে গেছে ব্রহ্মপূত্র নদের পেটে। সীমানা প্রাচীর গ্রাস হয়েছে। অবশিষ্ট ভবনটি নদী গর্ভে পড়লেই চিরতরে হারিয়ে যাবে প্রত্যন্ত্ম চরাঞ্চলে নির্মিত ওই এলাকার একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মাঝ নদীতে কাজ করার কোন কর্মসূচি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেই। অনুরোধ-উপরোধে যেটুকু ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল তাও এখন বালির বাঁধের মত স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। সেই সাথে ভেসে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মনোরম পরিবেশে শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আশংকা স্কুল ভেঙে গেলে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে। অভিভাবকরা তাদের দ্রত বিয়ে দিয়ে দিবেন।
দক্ষিন খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম মন্ডল জানান, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপূত্র নদের অভ্যন্তরে অবস্থিত দ্বীপ ইউনিয়ন নয়ার চর। এই চরের দক্ষিন খাউরিয়ায় ২০০৪ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নতুন ভবন নির্মান করা হয় ২০১৫ সালে।
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৯শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। চরের অনেক অশিক্ষিত পরিবার তাদের সন্তানদের এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করান। তাদের লেখাপড়া করিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু ব্রহ্মপূত্র নদের তীব্র ভাঙনের ফলে এবার প্রতিষ্ঠানের একমাত্র ভবনটিও হুমকীর মূখে পড়েছে। বিভিন্নভাবে দেন-দরবার করেও এটি আর রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ লেখাপড়া এখন অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে।

স্থানীয় অভিভাবক হাবিবুর রহমান ও আসমা বেগম জানান, গত দুই বছর ধরে এই এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। অনেক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনের তান্ডবে প্রতিষ্ঠানের মুল ভবন নদী গর্ভে চলে গেছে। নতুনভাবে নির্মিত ভবনের দুটি কক্ষে পাঠদান সম্ভব না হওয়ায় পার্শ্ববর্তী বাজারের হাটসেডে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাজারসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ভাঙনের মুখে রয়েছে। এটি ভেঙে গেলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চরম বিড়ম্বনায় পড়বে। ব্যহত হবে শিক্ষা কার্যক্রম।
জানা গেছে, চিলমারী উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে চিলমারী সদর, অস্টমীর চর ও নয়ারহাট ইউনিয়ন মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এই তিন দ্বীপ ইউনিয়নের অবস্থান ব্রহ্মপূত্র নদের বিভিন্ন চরে। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো শ্যালোচালিত নৌকা।
বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌরভ ও সানি জানায়, এই স্কুলঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেলে পড়াশুনা বিঘ্নিত হবে। কারণ এরপর এই স্কুল কোন চরে স্থাপন করা হবে আর আমরাই বা কোন চরে চলে যাবো তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। ফলে আমরা খুবই দুশ্চিন্ত্মার মধ্যে রয়েছি।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বৃষ্টি জানায়, আপনারা ভাঙন রোধে কিছু করতে পারবেন না। আমাদের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেলে অভিভাবকরা আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে। আমরা আরো পড়াশুনা করতে চাই। কিন্তু স্কুল নদীগর্ভে চলে গেলে আমাদের কী হবে?
নয়ারহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হানিফ জানান, প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা খুবই দুশ্চিন্ত্মায় রয়েছি। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রত ব্যবস্থা করা না হলে এটি আর রক্ষা করা যাবে না।
বিষয়টি নিয়ে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কেউ আগে অবগত করান নি। পর্যবেক্ষন করে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরের সহযোগিতা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত দুই বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি। এই গ্রামটিই ছিল একসময়ে ব্রহ্মপূত্রের মূল চ্যানেল। নদী আবার সাবেক অবস্থায় ফিরে আসার চেষ্টা করছে। এখন সরজমিনে দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ১৪,২০২২//

Discussion about this post