রহমান মৃধা:
বর্তমান বিশ্বে যে সমস্যা গুলো মানুষের সৃষ্টি তার সমাধান সমস্যার মধ্য দিয়ে শেষ হলেও এর ধারাবাহিকতা নতুন সমস্যার বীজ বপন করে চলছে। যুদ্ধের অবশান এক প্রান্তে হলেও শুরু হচ্ছে অন্য প্রান্তে। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো তাদের অতীতের অস্ত্রপাতি বর্তমান যুদ্ধে ব্যবহার করছে নতুন অস্ত্রপাতি তৈরি করার জন্য। একটি দেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে আবার নতুন করে গড়বে বলে। ক্যাপিটালিস্টরা এভাবেই তাদের ইনভেস্ট করে থাকে। একদিকে মানুষের জীবন বাঁচাতে ইনভেস্ট চলছে অন্যদিকে মানুষকে ধ্বংস করার জন্যেও পুঁজিবাদির পুজিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। চমৎকার বিশ্বে আমাদের বসবাস।শুধু বাংলাদেশের বিষয়টি যদি লক্ষ করা হয় যেমন ১০০ বেশি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে এবছরে শুধু ট্রাফিকের কারণে। ১০০ বেশি জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে শুধু অগ্নিদগ্ধে তারপর ঘুম, খুন, মহামারি এসবতো নেগে আছেই। এতকিছুর পরও জরিপে দেখা যাচ্ছে বেঁচে থাকার তাগিদে কোটি কোটি মানুষ কঠিন জীবন যাপন করে চলছে। গতকাল সুইডিশ টেলিভিশনের এক জরিপে বিশ্ব সরনার্থীর একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে দশকোটি শরণার্থী বিরাজমান এবং এর পিছনে ইতিহাস, ক্ষতি এবং কষ্টের গল্প রয়েছে।
এই মুহূর্তে – জুন, ২০২২ – বিশ্বে ১০০ মিলিয়ন মানুষ সংঘাত ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে শরণার্থী হয়ে নিজ, পার্শ্ববর্তী বা অন্যদেশে বিরাজ করছে। চিত্রটি ইউক্রেনের যুদ্ধ দ্বারা চালিত UNHCR ১৬ জুন, ২০২২ আপডেট পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
এই ১০০ কোটির মধ্যে ৫০.৯ মিলিয়ন তাদের নিজের দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
২৬.৬ মিলিয়ন অন্য দেশে চলে গেছে।
৪.৪ মিলিয়ন আশ্রয়প্রার্থী তাদের আবেদনের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে।
৪.১ মিলিয়ন ভেনেজুয়েলারা উদ্বাস্তু না হয়ে বা আশ্রয় না পেয়ে তাদের নিজ দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
UNHCR-এর মতে, ২০২০ সালে তুরস্কে ৩.৭ মিলিয়ন শরণার্থী ছিল। দ্বিতীয় বৃহত্তম আয়োজক দেশ ছিল কলম্বিয়া, যেখানে ২০২০ সালে ১.৭ মিলিয়ন শরণার্থী ছিল। তারপরে পাকিস্তান এবং উগান্ডা প্রতিটিতে ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থী নিয়ে আসে, এর পরে জার্মানি ১.২ মিলিয়ন উদ্বাস্তু। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী বা উদ্বাস্তু বলতে মায়ানমারথেকে বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী বা উদ্বাস্তুদের বুঝানো হয়ে থাকে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রায় ৬,৫৫,০০০ থেকে ৭,০০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বিগত তিন দশক ধরে মায়ানমার সরকারের সহিংস নির্যাতন থেকে ৩,০০,০০০ এর অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে অবস্থান করছে। এ মুহূর্তে কক্সবাজারে সব মিলিয়ে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তাছাড়া, ভারতের হায়দ্রাবাদের রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, ফলে মায়ানমারের মতো তারাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। প্রতিবেদনটি দেখে অনেক ভাবনা ঢুকেছে বিবেকে, সেই সঙ্গে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৪১–এ নামিয়ে এনেছে প্রশাসন।
সড়ক দুর্ঘটনার আগে সড়কের অবস্থা, গাড়ির ফিটনেস, চালকের দক্ষতা আর অগ্নিকান্ডের আগে সেফটি রুটিন, রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম এসবের উপর চড়া নজরদারি থাকা কি জরুরী নয়? দেশে কোন পদ খালি নাই, সবাই বেতন পাচ্ছে শুধু জনগণ তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, এটাই সত্য। এই সত্যকে কীভাবে দুর করা যায় দুর্নীতি ছাড়া তার জন্য কাজ করা দরকার। সেই কাজগুলো করার লোক থাকা সত্ত্বেও তা করা হচ্ছে না। যারা বেতন ভুক্ত তদারককারী তারা দেখছে অথচ কিছু করছে না। আমরা যারা বিষয়টি তুলে ধরছি জানি কিছু হবে না তবুও তুলে ধরছি কিন্তু কেও সেটার গুরুত্ব দিচ্ছে না, এভাবেই মূলত চলছে গোটা দেশ। পৃথীবির বেশির ভাগ দেশের অবস্থা একই তবে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে এ মুহুর্তে আমেরিকার হুমকি ছাড়া রাষ্ট্র কিছুই করতে রাজি নয়, এই কারণটি বুঝতে পারছিনে কোন ভাবেই! দেশের মালিক তাহলে কি অন্যকেও, আমরা ছাড়া!
এত কিছুর পরও বাংলাদেশে মানবতার টানে ছুটে আসছে O(-) negative রক্তদাতা একজন শারীরিক অক্ষম ভাই নাম মোহাম্মদ সায়মন আহমেদ।
যে কিনা নিজে চলাফেরা করতে অক্ষম সে ও আসছে মানবতার টানে।
হ্যাঁ এই সমাজ, এই দেশ এবং এই বিশ্ব কখনো হারবে না। জয় হবে মানুষের, জয় হবে মানবতার।
লেখক: সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

Discussion about this post