চিকিৎসার নামে ২৩লাখ টাকা হাতিয়ে ভারতে ফেলে এসেছে দালাল চক্র
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক রোগীর ২৩ লাখ টাকার উপরে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে একটি দালাল চক্র। চিকিৎসার নামে তাকে পাশের রাষ্ট্র ভারতে ফেলে পালিয়ে দেশে ফিরে দালাল চক্রটি।
এ ঘটনায় ওই রোগীর স্ত্রী বাদী হয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ করেন।তবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই রোগী। আর প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছে অসহায় পরিবার।প্রতারণার শিকার মিজানুর রহমান উপজেলার সারাবাড়ী এলাকার মৃত আব্দুল হামিদ বেপারীর ছেলে।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মিজানুর রহমানের লিভার নষ্ট। এতে হতাশায় ভুগছেন তিনি ও তার পরিবার। পরিবার বলতে তিনি ও তার স্ত্রী নাহিদ সুলতানা, ১০ম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছেলে নাফিজুর রহমান নয়ন এবং ২য় শ্রেনীতে পড়ুয়া অপর ছেলে নাফিউর রহমান নিহান।
এ দেশের চিকিৎসকরা তাকে ভারতে নিয়ে লিভার অপারেশনের পরামর্শ দেন। এ সুযোগে তার চাচী নাসরিন মুক্তির মামা দালাল বাবলু মিয়া প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানার দেলদুয়ার এলাকায়। পরে ওই দালাল বাবলু, নাসরিন মুক্তি, ইয়াছিন আলী, ফিরোজ, তানভীর ও খাজা মোহাম্মদ আলী মিলে ভারতে লিভার অপারেশনের জন্য তার সঙ্গে সাড়ে ২৮ লাখ টাকা চুক্তি হয়। এর মধ্যে ভারতে চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচের দায়বার নেন ওই দালাল। নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যক্তিগত গাড়ি ও জমি বিক্রি করে মিজানুর। গত ২৮ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টার দিকে উপজেলার সফিপুরে চাচা-চাচীর বাসায় বসে চুক্তি অনুয়ায়ী ১ম ধাপে সাড়ে ৬ লাখ টাকা দালাল চক্রকে দেয়। এরপর চক্রটি ২য় ধাপে ১২মে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেয়। গত ১৫মে ওই রোগী ও তার স্ত্রীকে নিয়ে ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যান দালাল বাবলু। সেখানে নিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি এবং থাকার ব্যবস্থা করেন ওই দালাল। এরপর ৩য় ধাপে ১৫জুন ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। সর্বমোট ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাকী টাকা অপারেশনের পরে নিবেন বলেও জানায় দালাল বাবলু। কিন্তু ওই দালাল বাবলু হাসপাতালে কোনো টাকা জমা না দিয়ে কৌশলে দেশে চলে আসে। অপর দালাল তানভীর সেখানে গেলেও শিরিন নামে আরেকজনকে দায়িত্ব দিয়ে কৌশলে চলে আসেন। ওই শিরিনকেও আরো দেড় লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন অসুস্থ মিজানুর। তখন ওই শিরিন তাকে আরো ২১ হাজার ডলার জমা দিলে তার অপারেশন হবে জানালে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন রোগীসহ তার পরিবার। আর টাকা না থাকায় চিকিৎসা না নিয়ে গত ১৭জুলাই তারা দেশে ফিরেন মিজানুর। এখন তিনি কখনো হাসপাতালে আবার কখনো
এ ঘটনায় গত ২৩ জুলাই তার স্ত্রী নাহিদ সুলতানা বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মিজানুর রহমান বলেন, আমিও মরতেছি, আমার জমি-গাড়ি বিক্রির টাকাও নিয়ে যাচ্ছেন। আমি মরার পর স্ত্রী-সন্তান কিভাবে চলবে? আমি তো বিনা চিকিৎসায় মরেই যাবো। মরার আগে আমার টাকাগুলো ফেরত চাই।
প্রধান অভিযুক্ত বাবলু মিয়া এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে অস্বীকার করে জানান, মিজানুরের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। অপর অভিযুক্ত নাসরিন মুক্তি মুঠোফোনে জানান, থানায় আমাকে ডেকেছিল। যা বলার পুলিশ অফিসারকে বলেছি, আপনাদেরকে কেনো বলবো।
কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ রাফসান মোল্লা জানান, এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এস//

Discussion about this post