শেখ সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট থেকে:
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবার আগে প্রয়োজন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেটা হোক সড়ক, রেলপথ, নৌপথ ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা। সকলক্ষেত্রে আধুনিকতা থাকতে হবে গণ পরিবহন ব্যবস্থায়। থাকতে হবে সবার উপর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এটা সত্য আমাদের দেশে এখনো নূন্যতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি যোগাযোগ ব্যবস্থায়। সকল বয়সের নারীদের জন্য তো নয়ই। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসেও এখনো দেশের মানুষ গণ পরিবহন ব্যবস্থায় নিজের নিরাপদ ভ্রমন আশা করতে পারে না। সেটা হোক রাষ্ট্রীয় পরিবহন ব্যবস্থা, বেসরকারি পরিবহন ব্যবস্থা বা ব্যক্তি পরিবহন ব্যবস্থা। পরিবহন ব্যবস্থা এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিনত হয়ে উঠছে দিন দিন। দেশের সবচাইতে নিরাপদ যানবাহন বলতে সাধারণ মানুষ মনে করত রেলওয়ে ট্রেন কিন্তু হঠাৎ নাশকতাকারীদের টার্গেটে পরিগণিত হয়ে উঠেছে যাত্রীবাহী ট্রেন গুলো। ট্রেনযাত্রীকে আগুনে পড়ে পড়ার মত ঘটনা অহরঅহ ঘটছে। ট্রেনেও নিরাপত্তা নেই। বাসে আগুন তো আছে। ইদানিংকালে ট্রেনে ও বাসে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলছে। শুধু রাজধানি ঢাকাতে নয়, ইদানিং মফস্বল শহরেও ট্রেনে ও যাত্রীবাহী বাসে ধর্ষনের ঘটনা ঘটছে।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি লালমনি এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনের ক্যাবিনে ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক শিশু নারী শিক্ষার্থী ট্রেনটির এ্যাটেন্ডেন্ট দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে।অথচ এ্যাটেন্ডেন্টের দায়িত্ব ছিল যাত্রীদের সেবা করা ও নিরাপত্তা দেয়া। তার মানে কোথাও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই। নারীদের তো নেই।
গণ পরিবহন কে যাত্রী বান্ধব করতে হলে আমার ব্যক্তিগত সুপারিশ গুলো নিম্নরূপ- গণ পরিবহন গুলোতে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, সকল গণ পরিবহনে বিনামূল্য ওয়াইফাই সংযোগ থাকা, গণ পরিবহনের প্রতিটি দরজায় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ বড় হরফে বাংলা ও ইংরেজিতে লিখে রাখা। গণ পরিবহনে বিশেষ করে ট্রেনে পুরুষ নিরাপত্তা কর্মী বা পুরুষ এ্যাটেন্ডেন্টের পাশাপাশি নারী এ্যাটেন্ডেন্ট ও নারী নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেয়া খুবেই জরুরি। সমান সংখ্যক পুরুষ ও নারী কর্মী রেলওয়ে যাত্রীতের নিরাপত্তা ও সেবা দিলে তারাও নিরাপদ থাকবে যাত্রীরাও নিরাপদ থাকবে। যেহেতু আজকাল রেলওয়ে ট্রেনের চালক নারী, চালকের সহকারী নারী রয়েছে নিরাপত্তা কর্মী বা যাত্রী সেবা দিতে এ্যাটেন্ডেন্ট নারী হলে সমস্যা কোথায়?। বাস, ট্রাক ষ্ট্যান্ড গুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। এমন কী প্রতিটি যানবাহনে ব্যক্তিগত ভিডিও ট্রাকার লাগাতে হবে। কোন পরিবহনের নামে কোন অভিযোগ উঠলে তাকে প্রমাণ করতে হবে ভিডিও ট্রাকার ছিল এ দেখুন ভিডিও। সড়ক ব্যবস্থাকে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। সড়কে কথিত পুলিশ ও কথিত শ্রমিকের চাঁদাবাজি, চুরি ডাকাতি হ্রাস পাবে। সড়ক দূর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
সবচেয়ে নিরাপদ সড়ক বা নিরাপদ যাত্রী বান্ধব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে একটা বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটা হচ্ছে রোড় ম্যানেজম্যান্ট। আমাদের দেশে নিরাপত্তার জন্য সড়কে পুলিশ রয়েছে, সড়ক সংস্কারের জন্য সড়ক ও জনপদ প্রকৌশল বিভাগ রয়েছে কিন্তু যেটা সবচেয়ে জরুরি ছিল সড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগ সেটা নেই।
সড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগ থাকলে তারা মহাসড়ক ও সড়ক নির্মাণের আগে প্রতিটি রাস্তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখত। রাস্তাটিতে কি ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। আগামী ১০ বছর পর এই রাস্তার উপর আরো কতটা চাপ পড়বে। রাস্তাটির প্রতিটি বাঁকে গাড়িতে গতিজড়তা কতটুকু হয় ইত্যাদ্দি। এসব রোড় ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্বাবোধানে করতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশে অর্ধেকের বেশীভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব।
এটা সত্য শুধু একমুখী রাস্তা করলে হবে না। একমুখী রাস্তায় প্রতিটি মোড়ের গতি জড়তা সম্পর্কে প্রকৌশলী জ্ঞান থাকতে হবে। কারণ একটি যাত্রী বা বা মালবাহী যানবাহন সেটা বাস বা ট্রাক হোক। সেটা গতি নিয়ে এসে মোড় ঘুরাতে ধরে হঠাৎ ব্রেক কষে, যদি মোড়ের রাস্তায় কোন কারণে গতি জড়তা হয়, তাহলে যানবাহনের চাকায় বিস্ফোরণ হবেই। এতে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল হবে। এভাবে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। আমরা সাধারণ তো দেখি কোথাও রাস্তায় ঘনঘন দুর্ঘটনা ঘটে। খালি চোখে বিষয়টি বুঝা যায় না।
সাধারণ মানুষ অজ্ঞতা বশে সেখানে দুষ্টচক্রের প্রভাব আছে মনে করে মাজার তৈরি করে। অথবা পুজো অর্চনা শুরু করে দেয়। বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যায় দেখা যাবে ঘনঘন দুর্ঘটনাস্থলে কোন না কোন ত্রুটি রয়েছে। তার মধ্যে গতিজড়তা অন্যতম হতে পারে। গতিজড়তা চোখে দেখা যায়না। এটা উপলব্ধির বিষয়। গাড়ি সড়কে উঠার আগে যথাযথভাবে ফিটনেস সার্টিফিকেট নেয়া, গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইন্সে থাকা। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ফিটন্সে ও চালক লাইন্সে নিয়েছে কিনা তা যাচাই করার ব্যবস্থা থাকা। জনসাধারণের দুর্ভোগ হ্রাস করতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় পরিবহন ব্যবস্তা গড়ে তুলতে হবে।
পরিবহন ব্যবস্থায় তথাকথিত প্রভাবশালী মালিক ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করতে হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন পরিবহন ব্যবস্থায় আন্তঃজেলা মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করতে হবে। দেশ জনগণে, রাস্ট্রীয় নেতা নেত্রী গণ গনের ভোটে নির্বাচিত অথচ জনগণ ইচ্ছে করলেই রাস্তায় যাত্রীবাহী বাস নামাতে পারে না। সেটা বড়বাধা হয়ে দাঁড়ায় কথাকথিত মালিক সমিতি। আবার এই মালিক সমিতির হয়ে কাজ করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও কথিত শ্রমিক নেতারা।
এদিকে প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৭’ আরও যাত্রীবান্ধব করতে হবে। এ দাবি জানিয়ে আছিল বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এছাড়াও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ২৮ দফা সহ নানা দাবি সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে করে আসিছে। এ গুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post