৬৫% অগভীর নলকুপে পানি নেই। বরফ কলের পানি কিনে চলছে জীবন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে মাটির ১ হাজার ফুট গভীরে নলকূপ স্থাপন করেও খাবার পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই উপজেলার বাসিন্দাদের।
পানির জন্য মানুষের মধ্যে হাহাকার। গ্রামের মানুষজন এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি ছুটছে সুপেয় পানির জন্য। কোথাও গভীর নলকূপে পানি উঠছে সামান্য, আবার কোথাও উঠছে না। যেখানে সামান্য পানি উঠছে সেখানে আবার লম্বা লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন গ্রামের গৃহবধুরা।
তাঁদের দাবি, ‘আমরা মৌলিক চাহিদার খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান চাই না, কোনো রকমে বেঁচে থাকার জন্য একটু সুপেয় নিরাপদ পানি চাই।’ আবেগজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের মাদ্রাসা গ্রামের গৃহিনী খাদিজা বেগম (৪২)।
স্থানীয়রা জানান, পাঁচ ইউনিয়নে লাখ লাখ মানুষ। কর্ণফুলীতে সুপেয় নিরাপদ পানির একমাত্র উৎস ৬৫% অগভীর নলকুপে আর সহজে পানি আসে না। অনেকেই আবার বরফ কলের পানি কিনে ব্যবহার করে কাটাচ্ছে নিত্য জীবন।
তথ্য বলছে, আজ থেকে ২৬ বছর আগেও গ্রামের মানুষেরা পানির সহজ স্তর ৩০/৩৫ ফুট মাটির নিচে সুপেয় পানির সন্ধান পেতেন কিন্তু তা আজ হারিয়ে গেছে। এছাড়া কিছু কিছু পুকুরের যৎসামান্য পানি আছে তাতে শেওলার দুর্গন্ধ হলেও তা বাধ্য হয়ে ব্যবহার করায় অনেকের পানিবাহিত রোগ পেটের পীড়াসহ, ডায়রিয়া ও আমাশয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বাসা ভাড়িতে বসানো সাধারণ টিউবওয়েল গুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় বেশির ভাগ নলকুপগুলো অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ধারণা বিগত ১০/১৫ বছরেরও অধিক সময়ে সাধারণ টিউবওয়েলে পানি ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করে। অভাবে পড়ে সুপেয় পানির। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ সমস্যা।
কেন কর্ণফুলীতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যাচ্ছে? এটা কী মানবসৃষ্ট, না অন্য কোন কারণ? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে পাঁচটি ইউনিয়ন যথা শিকলবাহা, বড়উঠান, চরলক্ষ্যা, জুলধা ও চরপাথরঘাটার অধিকাংশ সাধারণ মানুষেরা কিছু তথ্য দিয়েছেন।
তাঁরা জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন ও সরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার বিধি নিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুগুলি দেখিয়ে যেখানে সেখানে কর্ণফুলীতে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে পানির স্তর অনেক নিচে চলে যাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানায়, সরকারি উদ্যোগে উপজেলার দৌলতপুর গাবতল ২নং ওয়ার্ডে জনস্বার্থে গভীর টেস্ট টিউবওয়েল বসিয়ে এলাকার পানি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করেছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাতে ওয়াটার লেবেলে আর্সেনিক ও ক্লোরাইড এর পরিমাণ স্বাভাবিক ৩৫০ এর জায়গায় ১৮০০ মাত্রা। ফলে এ পানি খাবার যোগ্য না হওয়ায় নতুন পদ্ধতিতে পানির ব্যবহার ও খাওয়ার উপযোগী করার প্রতিশ্রুতির কথা শোনালেন।
এলাকাবাসী বলেছেন, গভীর নলকূপ বসানোর পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মজা পুকুরগুলো পুনঃখননসহ নতুন করে স্বাস্থ্যসম্মত রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং প্লান্ট নির্মাণ করা জরুরি। দরকার ‘ক্লোরাইড এন্ড আয়রন রিমুভাল প্ল্যান্ট’ও।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফারুক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সঙ্কট সমাধানে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির সার্বিক সহযোগিতায় ইতিমধ্যে একাধিক গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও আমরা চিন্তা করছি উপজেলা গভর্ন্যান্স প্রজেক্টর আওতায় প্রতিটি পুকুরের খননকাজ করার।’
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন রাসেল বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষুণ্ন হয়। প্রত্যক্ষভাবে যে সমস্যা সৃষ্টি হয় তা হলো, পানির স্তর ক্রমাগত নেমে যাওয়ার ফলে পানি তোলার ব্যয় বেড়ে যায় এবং পানির প্রাপ্যতা কমে যায়, এমনকি অতিরিক্ত পানি উত্তোলন করা হলে ভূমিধসের ঝুঁকিও বাড়ে।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘জুলধায় ৩-৪’শ ফুটে মোটামুটি পানি মিলে, বড়উঠানে মিলে ৬-৭’শ ফুটে, শিকলবাহার অবস্থা বেশি খারাপ, চরলক্ষ্যা এলাকার দুই ওয়ার্ডে পানি ভালো হলেও বেশির ভাগ এলাকায় খারাপ। সবচেয়ে কঠিন অবস্থা চরপাথরঘাটায়। ওখানে ৩-৪’শ ফুট পরে পাথর আর পাথর। বুরিং করাও কঠিন। অনেক জায়গায় এক হাজার ফুটেও পানি মিলে না।’
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//১৭এপ্রিল ২০২৪//

Discussion about this post