কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় পেয়েছেন গোল্ডেন এ প্লাস। অনার্স ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় ২৯৬ তম স্থান লাভ করেছিলেন।
রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়ের মেরিট লিষ্টে ছিলেন ৪৪৬। আর সারা বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএসটি ) ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকাতেও ৬৪.৭৫ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় স্থান করে নেন। অনেক কষ্টে, সাহায্যে সহযোগিতা আর সামান্য টিউশনির টাকা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হয়েছেন। কিন্তু এখন লেখাপড়ার ব্যয় কিভাবে জোগাড় হবে এই দু:শ্চিন্তায় এখন ঘুম হারাম কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারার অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী রিপা খাতুনের।
ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগর গ্রামের দিনমজুর , চরম হতদরিদ্র সুরুজ্জামান’র কন্যা রিপা খাতুন। পিতা নানা শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিয়মিত কাজ করতে পারেন না। কোন রকম এক বেলা খেয়ে না খেয়ে ২ মেয়ে, ১ ছেলে সহ ৫ জনের সংসার চলে। জরাজীর্ন জীবনে পুরানো আধা পাকা ৩ রুম বিশিষ্ট ঘরে শোয়ার চকি ছাড়া বলতে গেলে আর কিছইু নেই। টিউশনি করে পাওয়া সামান্য টাকা দিয়ে এতদিন কোন রকম নিজের লেখাপড়া চালিয়ে নিয়েছেন রিপা। মেধাবী রিপা খাতুন ২০১৬ সালে দামুকদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি, ২০১৮ সালে এসএসসি এবং ২০২০ সালে ভেড়ামারা সরকারী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ ৫ অর্জন করেন। স্বপ্ন ছিল ঢাকা অথবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু সামর্থ্য তো নেই। পেটই চলে না সেখানে আবার লেখাপড়া। আর ঢাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া তো স্বপ্নের মতো। অর্থাভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য কোচিং করতে পারেননি। বাড়িতে বসেই হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় ২৯৬তম স্থান লাভ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও মেধা তালিকায় ৪৪৬ তম স্থান লাভ করেন। সারা বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি জেএসটি) পরীক্ষাতেও অংশ নিয়ে ৬৪.৭৫ নাম্বার পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা অনেক ব্যায় বহুল হবে এই ভেবে সেখানে ভর্তি না হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে অর্নাস এ ভর্তি হন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও এখন তাঁর দু:শ্চিন্তা পড়ালেখা কিভাবে চলবে। পড়ালেখার ব্যায় কিভাবে নির্বাহ হবে। কোথায় পাবো টাকা। অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে না তো লেখাপড়া?
ডরপার বান্ধবী গোলাপনগর এলাকার শরিফা খাতুন জানান, চরম হতদরিদ্র রিপা। সে নিজের প্রচেষ্টায় খুব কষ্ট করে এতদুর লেখাপড়া চালিয়ে এসেছে। চরম মেধাবী হয়েও টাকার অভাবে এখন লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। প্রশাসনিক সহযোগিতা, সরকার উদ্দ্যোগ এবং বৃত্তবানরা তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলে সে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জল করতে সক্ষম হবে।
রিপা খাতুন জানান, অনেক কষ্ট, সংগ্রাম আর লড়াই করে জীবন যুদ্ধে টিকে আছি। লেখাপাড়া চালিয়ে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু লেখাপড়ার খরচ কিভাবে নির্বাহ করবো সে টেনশনে আমার ঘুম হয় না। তিনি বলেন, প্রতি মাসে লেখাপড়া এবং অনান্য খরচ হিসাবে প্রায় ৫ হাজার টাকার মত প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমার পরিবারের পক্ষে এই ব্যায় বহন করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। মাঝ পথে অর্থের অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেলে আমার স্বপ্নের অপমৃত্যু হবে। আমি চায়, লেখাপাড়া শেষ করে মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশ এবং জাতির কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করবো। ভালো একজন মানুষ হবো।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//

Discussion about this post