আজ ১০ রমজান। রহমতের শেষ দিন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী এ রমজান মাস। এমনই ভাবে অষ্টম হিজরির ১০ রমজান প্রায় দশ হাজার আত্নোৎসর্গী সৈন্যের এক বিরাট বাহিনী সঙ্গে নিয়ে বিশ্বসেরা রাষ্ট্রনায়ক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা অভিমুখে রওনা করলেন। পথিমধ্যে অন্যান্য আরব গোত্রও এসে হযরতের সাথে মিলিত হল। কাবাগৃহ ছিল খালেস তওহীদের কেন্দ্রস্থল। একমাত্র আল্লাহর বন্দেগীর জন্যে আল্লাহর নির্দেশে এটি নির্মাণ করেছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)। এ যাবতকাল এটি মুশরিকদের দখলে থেকে শিরকের বড় কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রকৃত পক্ষে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রচারিত দ্বীনের আহ্বায়ক। এ কারণে তিনি তওহীদের এই পবিত্র স্থানকে শিরকের সমস্ত নাপাকী ও নোংরামী থেকে অবিলম্বে মুক্ত করার একান্ত প্রয়োজন অনুভব করলেন। রাসুল (সাঃ) এবার অনুমান করলেন যে, আল্লাহর এই পবিত্র ঘরকে শুধু তাঁরই ইবাদতের জন্য নির্ধারিত করা এবং মূর্তিপূজার সমস্ত অপবিত্রতা থেকে মুক্ত করার উপযুক্ত সময় এসেছে। তাই তিনি চুক্তিবদ্ধ সকল গোত্রের কাছে এ সম্পর্কে পয়গাম পাঠালেন। অন্য দিকে এই প্রস্তুতির কথা যেন মক্কাবাসী জানতে না পারে, সে জন্য তিনি কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করলেন। এদিকে মক্কার চুরান্ত জয়ের আগেই আল্লাহর প্রিয় হাবিব মক্কাবাসীর মন জয় করাকে বড় বিজয় মনে করলেন।
যুদ্ধের পটভূমি : ৬ষ্ঠ হিজরিতে রাসুল (সা.) ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে বের হন। হুদায়বিয়া নামক স্থানে পৌঁছলে মক্কার কুরাইশরা তাঁর পথ রোধ করে। দুই পক্ষের মধ্যে ১০ বছরের জন্য সন্ধি হয়। সন্ধিতে যেকোনো পক্ষের সঙ্গে অন্য গোত্রের মৈত্রীচুক্তির অনুমোদন থাকে। সে মতে বনু বকর কুরাইশদের সঙ্গে আর বনু খোজায়া মুসলিমদের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করে। কুরাইশরা এই সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে। বনু খোজায়ার লোকেরা হারাম শরিফে আশ্রয় নিলেও তাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে তাদের অনেক লোক নিহত হয়। এই ঘটনার পর বনু খোজায়ার নেতা আমর ইবনে সালিম রাসুল (সা.)-এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তিনি তাদের সাহায্য করার আশ্বাস দেন। তিনি মক্কার কুরাইশদের কাছে এই মর্মে একটি বার্তা প্রেরণ করেন ১. খোজায়া গোত্রের নিহতদের রক্তপণ শোধ করতে হবে, ২. অথবা বনু বকরের সঙ্গে কুরাইশের মৈত্রীচুক্তি বাতিল করতে হবে, ৩. অথবা হুদায়বিয়ার সন্ধি বাতিল বলে ঘোষণা করতে হবে। কুরাইশরা তৃতীয় শর্ত গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে তারা নিজেদের ভুল সিদ্ধান্ত বুঝতে পেরে সন্ধি নবায়নের জন্য আবু সুফিয়ানকে মদিনায় প্রেরণ করে। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়ে মক্কায় ফিরে যায়। অষ্টম হিজরিতে বিশ্বমানবতার কেন্দ্রভুমি মক্কা পঙ্কিলতামুক্ত করার জন্য বিশ্বনবী নীরব আয়োজন করলেন। তিনি ধ্বংযজ্ঞ চান না, তিনি কুরাইশদের রক্ষা করতে চান। তিনি চান প্রেম ও ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ১০ রমাদান ১০ হাজার সাহাবিসহ মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করলেন। আজকে সেই ১০ রমজান।
লেখক- কামিল (আল হাদিস) মাস্টার্স (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

Discussion about this post