Tuesday, 13 May 2025
🕗
দৈনিক দেশতথ্য
Advertisement
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় খবর
  • স্বদেশ খবর
  • বিদেশি খবর
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • কৃষি
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • ধর্ম
  • আইটির খবর
  • লাইফস্টাইল
    • ভ্রমণ তথ্য
  • সম্পাদকীয়
    • মতামত
  • অন্যান্য
    • প্রাপ্ত বয়ষ্কদের পাতা
    • সাহিত্য ও সংষ্কৃতি
    • স্মৃতিচারণ/স্মরণ
    • ফটো গ্যালারী
  • ই-পেপার
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় খবর
  • স্বদেশ খবর
  • বিদেশি খবর
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • কৃষি
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • ধর্ম
  • আইটির খবর
  • লাইফস্টাইল
    • ভ্রমণ তথ্য
  • সম্পাদকীয়
    • মতামত
  • অন্যান্য
    • প্রাপ্ত বয়ষ্কদের পাতা
    • সাহিত্য ও সংষ্কৃতি
    • স্মৃতিচারণ/স্মরণ
    • ফটো গ্যালারী
  • ই-পেপার
No Result
View All Result
দৈনিক দেশতথ্য
No Result
View All Result

আদিবাসী শব্দ ব্যবহার জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিস্তারে নারী সমাজের ভূমিকা—–সারা মারান্ডী

দেশতথ্য ডেস্ক by দেশতথ্য ডেস্ক
08/08/2022
in মতামত
Reading Time: 1 min read
0
Share on FacebookShare on Twitter Share on E-mail Share on WhatsApp

গত ২৭ জুলাই দিনাজপুর সদর  উপজেলার প্রত্যন্ত এক সাঁওতাল পল্লীতে অফিসের পরিদর্শনের কাজে গিয়েছিলাম। সাথে ছিলেন দাতা সংস্থার কর্মকর্তাগন। সাঁওতাল জাতিসত্তার অতিথি বরন এর ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের মাধ্যমে আমাদের দারাম বা বরণ করে নেয়। বরণ করার পর বেশ আনন্দে উচ্ছল হয়ে উঠি বরাবরের মতন । নারীদের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে তাদের উৎসাহ বাড়াতে আমার বক্তব্যের প্রথমেই জিজ্ঞেস করি-“আপনারা কি জানেন পাশ^বর্তী দেশ ভারতে সম্প্রতি আদিবাসী এক জন সাঁওতাল নারী বিশাল সফলতা অর্জন করেছেন!” আমি ধরেই নিয়ে ছিলাম এত বড় ঘটনা এখানকার সাঁওতাল পল্লীতেও বুঝি সাঁওতাল নারীরা পর্যন্ত জেনে গেছে। কিনতু উত্তর এলো- “না জানি না, কি হয়েছে ভারতে?”তাদের উত্তরে একটু ধাক্কা খেয়েছি যদিও; তবে খুব অবাক হয়নি।  কারণ প্রত্যন্ত এলাকার এই সাঁওতাল নারীরা এখনও সেই ভোরের আলো উঁকি দেবার সাথে সাথেই বিছানা ছেঁড়ে  উঠে পড়ে। উঠোন ঝাঁট দেওয়া, গোয়ালের গরু ছাগল বের করা, রান্নাবান্না সেরে চারটে খেয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে অন্যের জমিতে চলে যায় শ্রম বিক্রি করতে। রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধই বা কি, কোভিড-১৯ মহামারীই বা কি, তেল,জ¦ালানীর দাম বাড়লো বা কমলোই বা কি।  তাদের কাছে এই খবরগুলোও খুব আসে না বা খবর গুলো তাদের জীবনেই বা কি প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে রাতের ঘুম নষ্টও হয় না। তাদের নির্ধারিত মজুরী এখনও পুরুষদের তুলনায় কম। যেখানে পুরুষেরা সারা দিন জমিতে শ্রম বিক্রি করে ৩০০ টাকা পায়, সেখানে নারীরা পায় ২৫০ টাকা। তাদের এত খবর রেখে বা না রেখেই কি হবে।

এই যে বার বার আদিবাসীদের নাম নিয়ে কত পরিপত্র জারি, ঘেরাও, আন্দোলন। হয়তো সেই চিম্বুক পাহাড়ে যে মারমা নারীটি জুম চাষে ব্যস্ত বা দিনাজপুর নবাবগঞ্জের আশুরার শাল বনে যে সাঁওতাল নারী পাতা ঝাঁট দিয়ে বস্তায় তুলে নিয়ে এসে বিক্রি করে বাড়ীর জন্য চাল কিনে নিয়ে যাবে তার কাছে এই খরবগুলো পৌঁছায়ও না । তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ কেউ বলুক আর না বলুক কেউ দ্বায়িত্ব দিক বা না দিক এই নারী সমাজ অনেক সচেতন ভাবে যুগ যুগ ধরে পালনে কোন বিঘ্ন ঘটায়নি । তা হলো নিজ ঐতিহ্য,সংস্কৃতি, রক্ষা ও লালন। এই নারীরাই আজও বাঁচিয়ে রেখেছে স্বীয় জাতিসত্তার অস্বিত্ব। বিশে^র প্রতিটি আদিবাসী নারীকে স্যালুট। যারা নিরবে নিভৃতে অস্বিত্ব রক্ষার কাজ করে চলেছে। আদিবাসী নারীদের এই অবদানের কথাগুলো উল্লেখ করা হল্ োকারন, ৯ আগষ্ট আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবসের -এবারের  প্রতিপাদ্য-“ ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিস্তারে আদিবাসী নারী সমাজের ভূমিকা”। 

আমরা জানি যে, বিশে^র ৫ টি মহাদেশের  ৯০ টি দেশে প্রায় ৫০০০ টি আদিবাসী জাতিসত্তার  ৪০ কোটি আদিবাসী মানুষের বসবাস। যা বিশে^র মোট জনসংখ্যার ৫শতাংশের  কম এবং এর ১৫ শতাংশ হলো অতি দরিদ্র।  বসবাসরতঃ এই আদিবাসীরা ৭০০০ ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে এবং ৫০০০ বৈচিত্রময় সংস্কৃতির ধারক ও বাহক । গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে,  এই সকল আদিবাসীরাই বিশে^র ২০ শতাংশ এর বেশী পরিমান ভূমিতে বসবাস করছে এবং ৮০শতাংশেরও বেশী সাংস্কৃতিক ও জীববৈচিত্র্য লালন,পালন ও রক্ষা করে আসছে। এই আদিবাসী জাতিসত্তাসমূহের  নিজস্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত অধিকার রয়েছে । যা বিভিন্ন ঘটনাবলীর কারনে বিশ^ ব্যাপী হুমকী, নির্যাতিত, নিষ্পেষন, হেয়প্রতিপন্ন হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে আদিবাসীরা তাদের অস্তিত্ব সংকটে জর্জরিত। বিশ^ময় আদিবাসীদের এহেন পরিস্থিতি বিশেষ গুরুত্বের সাথে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় দেখেছে।  আদিবাসীদের মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতার প্রসার , স্ব স্ব সংস্কৃতি লালন, পালন, সংরক্ষণ ও চর্চার মাধ্যমে এর ধারা অব্যাহত রাখতে পারে এবং আদিবাসী সমাজের সমস্যাগুলো সরকারসহ বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও সচেতন সমাজ যাতে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে অব্যাহত রাখতে পারে । এ মর্মে  ৯ আগষ্ট  ১৯৮২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রসংঘ সর্বপ্রথম আদিবাসী বিষয়ক কাজ শুরু করে। উক্ত দিনে “ রাষ্ট্রসংঘের আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিষয়ক ওর্য়াকিং গ্রুপ” এর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।  এ স্মরনীয় দিনটিকে কেন্দ্র করে ২৩ ডিসেম্বর ১৯৯৪ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারন পরিষদ কর্তৃক ৯ আগষ্ট দিনটিকে “আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস” হিসেবে ঘোষনা প্রদান করা হয়।  এরই ধারাবাহিকতায় বিশে^র অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে আর্ন্তজাতিক আদিবাসীদিবস ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয় প্রজ্ঞাপন তারিখঃ ০৫ চৈত্র ১৪২৫ বঙ্গাব্দ/১৯ মার্চ ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ অনুযায়ী বাংলাদেশ মোট ৫০ টি আদিবাসী জাতিসত্তার বসবাস। তবে উদ্বেগের বিষয় যে, ভাষা গবেষনা ইন্সটিটিউট এর এক গবেষনা অনুযায়ী দেশের বসবাসরতঃ আদিবাসী জাতিসত্ত্বার ১৪ টি ভাষা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব তার ভাষণে বলেছিলেন বিশে^ প্রতি দুই ঘন্টায় একটি ভাষার মৃত্যু হয়। একটি ভাষার মৃত্যু মানে একটি জাতিসত্তার বিলুপ্তি। সেই জাতিসত্ত্বার গান, কবিতা, গল্পগাঁথা ধ্বংস হয়ে যাওয়া। ভাষার প্রতি বিশে^ অনন্য দৃষ্টান্ত রচনা করে গেছে সালাম,বরকত,রফিক, জব্বার। আমাদের বাংলা ভাষা গৌরবের সাথে রক্ষার্থে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে পিছুপা হয়নি বাংলার দামাল ছেলেরা। তাইতোর বিশে^ ২১ ফেব্রুয়ারী মর্যাদা পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের।

আমাদের এই বাংলাদেশ একটি বৈচিত্রপূর্ণ দেশ। এই বৈচিত্রতাকে আরও সুদৃরহ্ করে তুলেছে বৈচিত্রময় ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষেরা। বাঙ্গালী জাতিসত্তার পাশাপাশি  এই দেশে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা-ভাষির মানুষেরা। এর মধ্যে সাঁওতাল, ওঁরাও,মুন্ডা, মালো,গারো, চাকমা, মারমা,লুসাই সহ ভিন্ন ভাষাভাষির মানুষ । বৈচিত্রময় জাতিসত্তার মানুষগুলো বসবাস করে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে, সিলেট, মৌলভিবাজারের খাসিয়া পুঞ্জি, ময়মনসিংহ,সিরাজগঞ্জ,মধুপুর, খুলনার বাগেরঘাট, সাতক্ষীরা ,উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে সমতল ভূমিতে বসবাসরতঃ বৈচিত্রময় জাতিসত্ত্ার মানুষেরা। প্রতিটি জাতিসত্তারই রয়েছে নিজ নিজ মাতৃভাষা, ঐতিহ্য, রীতিনীতি,খাদ্যাভাস,পোশাক-পরিচ্ছদ, সামাজিক প্রথা। যা যুগ যুগ ধরে এই জাতিসত্তার মানুষেরা লালন, পালন ও সংরক্ষণ করে আসছে। এই সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটিই পালন করে আসছে নারীরা । যদিও বা কালপরিক্রমায় নগরায়ন, ধর্মান্তকরন ও পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগ না থাকায় অনেক কৃষ্টি সংস্কৃতি আজ হুমকীর মধ্যে। এর পরও যতটুকু বেঁচে আছে তার বেশীরভাগটাই সম্ভব হয়েছে নারীদের জন্য। কারন তারাই সংস্কৃতির রীতি-রেওয়াজ, কৃষ্টি ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে চলেছে নীরবে নিভৃতে।

সমতলের সাঁওতাল গ্রাম গুলোতে গেলে তারই নিদর্শন আজও পাওয়া যায়। সারি সারি মাটির তৈরী ঘর।  মাটির দেওয়ালে  হরেক রংয়ের বাহারী ফুল, ডাল-পালা,ময়ূর আর অনেক কারুকাজে সাজিয়ে তোলা ও ঘরের চারিপাশে ঝকঝকে তকতকে করে রাখতে ভালবাসে সাঁওতাল রমনীরা। ঘরের আঙ্গিনায় দেশীয় ফুল প্রায়শঃ চোখে পড়বে মোরক ফুল, লাল জবাসহ অন্যান্য ফুল। সাঁওতাল ঘরে এক ধরনের ঝাটা বা ঝাড়ু পাওয়া যায়। ঘরের এক কোন এক থোক ঝাটা বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায় সারা বছরের ব্যবহারের জন্য। এটিকে “শিরম জনক” বা “শিরম ঝাটা” বলা হয়। সাঁওতাল নারীরা নদীর আশ পাশ দিয়ে একটি একটি করে শিরম তুলে এনে শিরম ঝাটা বানাতে পারে। ঘরের আঙ্গিনায় ধান সিদ্ধ করার পর শুকোনোর আগে “গুরিক” বা গোবর দিলে লেপা হয় আঙ্গিনা । যা শিরম ঝাটা দিয়েই করে থাকে নারীরা । এতে গোবর আর জল মেশানো পানি বালতি থেকে একটু একটু করে ছিটিয়ে দিয়ে ঝাটা দিয়ে দুপাশে লেপানোর পর খুব সুন্দর একটা নক্্রা তৈরী হয় মাটিতে। যা শুকোনোর পর ঝকঝকে লাগে। সাঁওতাল নারীদের ক্ষেত্রে একসময় খুব বেশী প্রচলন ছিল হাতে উলকী বা ট্যাটু করা। গ্রামের অনেক মুরুব্বী নানী দাদীর গলায় হাতে এই উলকী বিভিন্ন ভাবে পাওয়া যায় আজও। মজার ব্যপার এখন আধুনিক এই যুগে পাশ্চাত্য সহ হাল ফ্যাশানেও দেখা যায় ট্যাটুর প্রবনতা। সাঁওতাল একটি ঘরে মাচি বা ছোট বসার মোড়া, একটু গর্ত কুলা যাকে হড় হাটাক্ বলে ,খাটিয়া বা দড়ির খাটও একটি আদি নিদর্শন। সাঁওতাল কোন পরিবারে গেলে আজও নারীরা কাঁসার ঘটিতে জল দিয়ে প্রনাম বা “ডবক্” করে, কাঁসার থালাতে পা ধুয়ে বরন করে শ্রদ্ধা জানায়। সাঁওতাল সহ ওঁরাও, মুন্ডা, কোড়া, পাহাড়ী,তুড়ি, মুসহর ও অন্যান্য জাতিসত্তার নারীরা উৎসবে বাহা, কারাম, সহরায়,জিতিয়ায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করে থাকে । সে সময় তারা গান, নাচ ও আদি পোশাক, গহনা পরিধান করে শুধু উৎসব পালন করে তা নয় কিন্তু নিজ কৃষ্টি সংস্কৃতি ঐতিহ্য বিকাশ, লালন ও রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই পালন করে থাকে।

দেশে বৈচিত্রময় জাতিসত্ত্বার কৃষ্টি সংস্কৃতি লালনে ও পালনের জন্য ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক একাডেমী রয়েছে। এর মধ্যে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রাজশাহী, নজিপুর, দিনাজপুর এ রয়েছে। যদিও বা সমতলে প্রায় ৩৩ টি জাতিসত্বার বসবায় । ভৌগলিক কারনবশতঃ  ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে এরা । এর ফলে এই তিনটি একাডেমীতে শুধুমাত্র পাশ^বর্তী মানুষজন যেতে পারে। অপরপক্ষে নজিপুর ও দিনাজপুর একাডেমী ভবন এর কাজ সম্পন্ন হলেও নিয়োগ ও কার্যকর হতে আরও কত সময় লাগবে সঠিক জানা নেই। এক্ষেত্রে সাধুবাদ দিতে হয় এলাকায় কর্মরতঃ বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সমূহ , সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, গন সংগঠন যারা সমতলে বসবসারতঃ বৈচিত্রময় জাতিসত্তার মানুষের সংস্কৃতি,অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে চলেছে।গারো, চাকমা সহ পার্বত্য অঞ্চলে নারীরা তাদের পোশাক পরিচ্ছদ, জুম চাষ,খাদ্যাভাস, গৃহস্থালী ব্যবহৃত তৈজসপত্র, উৎসব এর মাধ্যমে নিজ সংস্কৃতি ধরে রেখেছে ।

বাংলাদেশে বসবাসরতঃ ৫০ টি আদিবাসী ভাষার মধ্যে পাঁচটি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে সাধুবাদ পাবার যোগ্য।  আরও যে ভাষা, ঐতিহ্য, কৃষ্টি সংস্কৃতি রক্ষা ও লালনের গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্রের আশু পদক্ষেপ গ্রহন করা অত্যাবশক।  তা না হলে এই বৈচিত্র্যের সমাহারও দিনে দিনে বিলুপ্তের দিকে ধাবিত হতে পারে। বৈচিত্রতাই পারে মানুষের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ জাগ্রত করতে, মনণশীলতার বিকাশে ভূমিকা রাখতে ও উদারতা ও সম্প্রীতি অটুট রাখতে।

আদিবাসী নারীরা তাঁদের ঐতিহ্যগত জ্ঞান দিয়ে যুগ যুগ ধরে সমাজ সংস্কারে যে অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে। তাদের হাত ধরেই কৃষি কাজের সূচনা হয়েছে এবং সভ্যতার বিকাশ সাধন হয়েছে। তথাপি তারা সমাজে মর্যাদা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পেছনের সারিতেই রয়ে গেছে। এই নিরবে কাজ করা নারীদের সামনে তুলে নিয়ে আনার দিন এসেছে । তাদের সন্মান দেওয়া,সন্মানীত করা এবং এই প্রজন্মকে জানানো তাদের ভূমিকা সম্পর্কে।

সবচেয়ে মজার ব্যপার গারো, সাঁওতাল, মুন্ডা গ্রামে কোন একাডেমী না থাকলেও প্রতিটি শিশুরা এমনি এমনি নাচতে ও গাইতে শিখে যায়। যা এই মানুষগুলোর রক্তে প্রবাহিত। এরা প্রকৃতির সন্তান, ভূমিপুত্র, প্রকৃতিকে ধবংস নয় কিšতু রক্ষা করে প্রকৃতিকে সাথে করে জীবনযাবন করাই এদের মূল্যবোধ।

এত বৈচিত্রতা, প্রকৃতিকে সাথে নিয়ে বাঁচার অনুশীলন, নীরবে নিজ সংস্কৃতিকে যে আদিবাসী নারীরা লালন,পালন,সংরক্ষণ করে চলেছে তারা অনেকেই হয়তো জানেও না বার বার এই আদিবাসী ডাকটি যে ছিনিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বা এটি যে বলা যাবে না। কারন আদিবাসী নামে যারা জন্ম থেকে জেনে এসেছে হয়তো খাতা কলমে একেক সময় একেক নাম হবে। কিšতু তাদের ভাগ্য পরিবর্তন খুব একটা বেশী হয় না।

আদিবাসী সংজ্ঞা নিয়েও আছে অনেক বির্তক। তবে, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাব-কমিশন এর স্পেশাল রেপোর্টিয়ার গৎ. ঔড়ংব গধৎঃরহবু ঈড়নড় (মিঃ জোসে মার্টিনাজ কোব) এর আদিবাসী সংজ্ঞা অনুযায়ী “ আদিবাসী বা ইন্ডিজিনাস কমিউনিটিজ,পিপলস্ ও নেশন হলো ওরা,যাদের প্রাগ্-আগ্রাসন ও প্রাগ্-উপনিবেশিক সমাজগুলির সাথে একটা ঐতিহাসিক ধারাবাহিক সম্পর্ক আছে,এ সম্পর্ক তাদের ভূখন্ডের উপর গড়ে উঠেছে এবং ঐ ভূখন্ডের মধ্যে বর্তমান সমাজের অন্যান্য সেক্টরগুলি থেকে তাদেরকে স্বাতন্ত্র্য বা অংশ হিসেবে মনে করে। তারা বর্তমানে নিজেদের সমাজে নিজেদের মধ্যে অনাধিপত্যমূলক সেক্টর গঠন করে এবং তারা তাদের পৌরাণিক ভূখন্ডগুলি রক্ষা ও মানুষ হিসেবে নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, সামাজিক প্রতিষ্ঠার ও আইনগত পদ্ধতিগুলির সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের ধারাবাহিক অস্তিত্ব রক্ষা করছে ও তাদের জাতিগত পরিচিতি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে স্নানান্তর করতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ”

আসলে আদিবাসী কথাটির ইংরেজী ইন্ডিজেনাস। জাতিসংঘের ঘোষনাকে সামনে রেখে ইন্ডিজেনাস হিসেবে পরিচিত হওয়ার দাবী বাংলাদেশের আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবী।  আদিবাসী শব্দটি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে হয়রানী যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। অথচ বিভিন্ন দলিলপত্রে আদিবাসী শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। পার্বত্য চট্টগাম শাসনবিধি ১৯০০ সালের বিভিন্ন ধারায় ( ধারা নং ৪,৬,৩৪,৪৫,৫০) পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের ইন্ডিজেনাস হিলমেন/ইন্ডিজেনাস ট্রাইবস্ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। ফাইন্যান্স এন্ড ইনকাম ট্রাক্্র এক্ট এ পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের আয়কর রহিতকরণ প্রসঙ্গে ও ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিন্যু এর বিভিন্ন দলিলপত্রে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের “ইন্ডিজেনাস হিলমেন” হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। ইংরেজ আমলের “ বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন” ও তারই অনুসারে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০, যা এখনও বলবৎ আছে, তাতে সমতলের আদিবাসীদের “ এ্যাবরোজিনাল ট্রাইবস্” নামে সম্বোধন করা হয়েছে। ন্যাশনাল পোর্ভাটি রিডাকশান স্ট্রাটেজি পেপার ( পিআরএসপি) সরকারের দারিদ্র্য নিরসনের একটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলপত্র, যেখানে দেশের আদিবাসীদের“ আদিবাসী/এথিনিক/মাইনোরিটিজ” নামে সম্বোধন করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ এ আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটানোসহ আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ অধিকারের কথার বলা হয়েছে। ইন্ডিজেনাস হিসেবে আইএলও কনভেনশন ১০৭-এ স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ এটি অনুস্বাক্ষর করেছে। যেখানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সামাজিক,অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ সাধন ও তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সদস্য রাষ্টগুলো দায়িত্ব পালন করবে বলে স্বীকার করা হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বা বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালীন মাননীয় শেখ হাসিনা ( ২০০০,২০০৩,২০০৬,২০০৯) আদিবাসীদের আদিবাসী অভিহিত করে বাণী প্রদান করেছেন।

বাংলাদেশে আদিবাসীরা নিজ স্বতন্ত্র পরিচয় ও সংস্কৃতি নিয়ে এদেশের মাটিতে মানুষ হিসেবে মর্যাদার সাথে বাঁচার অধিকার চায়। 

কিছুদিন আগে বান্দরবান গিয়েছিলাম সেখানে চিম্বুক পাহাড়ের পাশে একটি টং ঘর দেখলাম। টং ঘরটা বাঁশের তৈরী। একটা বারান্দাও আছে বাঁশের । বারান্দার মাঝখান দিয়ে ফুঁড়ে উঠেছে একটা বড় গাছ। গাছটা বারান্দার শোভা বর্ধন করছিল । আমি জিজ্ঞেস করলাম ঘর বানানোর সময় গাছটা কি ছিল?মারমা ভদ্র লোকটি বললেন-“আমরা তো কোন গাছ কাটি ন্,া গাছকে গাছের মত রেখে দিয়েই কাজ করি।” অথচ পাহাড়ের পাশদিয়ে নতুন নতুন ব্যবসায়িক স্থাপনা পাহাড়ের বুক কেঁটে রক্তাক্ত করছে প্রতিনিয়ত। যেখানে পাহাড় সমতলের নারীদের আর্তনাদ পৌঁছায় না।

—সারা মারান্ডী-সমাজকর্মী ও গবেষক

Tags: আদিবাসী শব্দ ব্যবহারসারা মারান্ডী
প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন
Previous Post

পাইকগাছায় মামার বাড়িতে গিয়ে ছাত্রীর আত্মহত্যা!

Next Post

ভেড়ামারায় পাওয়া লাশের হত্যা রহস্য উদঘাটিত

Related Posts

ভাষা আন্দোলনে বাউল কামাল পাশা ও সুনামগঞ্জের ছাত্রসমাজ
মতামত

ভাষা আন্দোলনে বাউল কামাল পাশা ও সুনামগঞ্জের ছাত্রসমাজ

খাইতে পারি না পড়াশোনা করাব কিভাবে?
মতামত

খাইতে পারি না পড়াশোনা করাব কিভাবে?

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি
মতামত

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি

Next Post
ভেড়ামারায় পাওয়া লাশের হত্যা রহস্য উদঘাটিত

ভেড়ামারায় পাওয়া লাশের হত্যা রহস্য উদঘাটিত

Discussion about this post

সর্বশেষ সংবাদ

কলাপাড়ায় বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড

কলাপাড়ায় বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড

কুয়াকাটা পৌর আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক গ্রেফতার

কুয়াকাটা পৌর আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক গ্রেফতার

হাটহাজারীতে ডাকাতির ঘটনায় তিন ডাকাত গ্রেফতার

হাটহাজারীতে ডাকাতির ঘটনায় তিন ডাকাত গ্রেফতার

বেনাপোলে বিপুল পরিমাণে ভারতীয় পণ্য আটক

বেনাপোলে বিপুল পরিমাণে ভারতীয় পণ্য আটক

মির্জাপুরে শত বছরেও লৌহজং নদীর উপর নির্মাণ হয়নি পাকা সেতু

মির্জাপুরে শত বছরেও লৌহজং নদীর উপর নির্মাণ হয়নি পাকা সেতু

আর্কাইভ

May 2025
S M T W T F S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
« Apr    

প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ আব্দুল বারী
ইমেইলঃ dtbangla@gmail.com

Mobile No- +88 01710862632
ঢাকা অফিসঃ ৩৩ কাকরাইল (২য় তলা)
ভিআইপি রোড, কাকরাইল ঢাকা -১০০০
প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠানোর ইমেল:
newsdtb@gmail.com
কুষ্টিয়া অফিস: দৈনিক দেশতথ্য
দাদাপুর রোড (মজমপুর)
(কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের সামনে)
মোবাইল:01716831971

Copyright © 2024 dailydeshtottoh All right reserved. Developed by WEBSBD.NET

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় খবর
  • স্বদেশ খবর
  • বিদেশি খবর
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • কৃষি
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • ধর্ম
  • আইটির খবর
  • লাইফস্টাইল
    • ভ্রমণ তথ্য
  • সম্পাদকীয়
    • মতামত
  • অন্যান্য
    • প্রাপ্ত বয়ষ্কদের পাতা
    • সাহিত্য ও সংষ্কৃতি
    • স্মৃতিচারণ/স্মরণ
    • ফটো গ্যালারী
  • ই-পেপার

Copyright © 2024 dailydeshtottoh All right reserved. Developed by WEBSBD.NET

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist