ইরফান উল্লাহ, ইবি :
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর রহস্যময় মৃত্যুতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জিয়াউর হল প্রশাসন।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠনের কাজ চলছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) শহীদ জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল গফুর গাজী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়। এতে তিনি আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল বারীকে সদস্য ও হলটির আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ.হ.ম নুরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি গঠন করেন।
জানা গেছে, সাজিদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শহিদ জিয়াউর রহমান হলে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। তার বাবা মুহাম্মদ আহসান হাবিবুল্লাহ দেলোওয়ার। তিনি একটি মাদ্রাসার সুপারেনডেন্ট।
বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে হল সংলগ্ন পুকুরে একটি মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর মারা গেছে না বেঁচে আছে এইটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার পরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করলে সেখানে মৃত ঘোষণা করা হয়। এবং পোস্টমর্টেম এর জন্য পাঠানো হয়। পোস্টমর্টেম শেষে আজ বেলা ১১টার দিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মসজিদে সাজিদের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
সাজিদের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে হতবিহ্বল তার সহপাঠী, শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সাজিদবন্ধুবৎসল, হাস্যোজ্জ্বল ও সংস্কৃতিমনা হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে -এ নিয়ে আলোচনা ও উদ্বেগ বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তার মৃত্যুর ঘটনাটি ‘রহস্যজনক’ এবং এর পেছনের কারণ উদ্ঘাটনে সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সাজিদের ঘনিষ্ঠ বড় ভাই ওয়াহেদ বিন আসাদ বলেন, পানিতে ডুবে মারা গেলে সাধারণত আমরা দেখি তার লাশ উপুড় হয়ে থাকে, কিন্তু সাজিদের মরদেহ ছিল চিত হয়ে। এছাড়া পানিতে ডুবে কেউ মারা গেলে তার পেটসহ শরীর ফুলে যায়। কিন্তু সাজিদের শরীরে আমরা তেমন কোন লক্ষণ দেখিনি। এজন্য এই মৃত্যুকে আমরা রহস্যজনক মনে করছি।
শিক্ষার্থী ওয়ালীউল্লাহ বলেন, সাজিদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। সদালাপী ও হাস্যোজ্জ্বল এক মুখ। আজ হল পুকুরে তার মরদেহ ভেসে উঠেছে। এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়, এত শত শিক্ষার্থী, কেউ কিছুই বুঝতে পারল না?
আবু রাইহান রনি বলেন, সাজিদ কি আসলেই পানিতে ডুবে মারা গেছে নাকি মেরে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে—এটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। সাজিদ ছোট বাচ্চা না যে খেলতে খেলতে পা পিছলে পুকুরে পড়ে মারা যাবে। ক্যাম্পাসে যার শতাধিক বন্ধু সে কেন শখের বসে কাউকে না বলে একা একা পুকুরে যাবে গোসল করতে। সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। হয়ত এর মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে৷
এ ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তার বিভাগ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গভীর শোক প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন পৃথক বিবৃতি দিয়ে শোক জানান এবং মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের দাবি জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, “সাজিদ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হলে থাকতেন। পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কীভাবে মারা গেছে তা এই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। হল প্রশাসন ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর পক্ষে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কাজ চলমান। সাজিদের পোস্টমর্টেম হয়ে গেছে। সবকিছুর প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারব।”
সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ এসেছিলেন কুষ্টিয়ায় ছেলের জানাজায়। তিনি বলেন, “আমার ছেলের মৃত্যু রহস্যজনক। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”
সুরতহাল প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক হোসেন ইমাম বলেন, “প্রাথমিকভাবে তার শরীরে অপমৃত্যুর কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে ভিসেরা রিপোর্ট আসার পর আমরা নিশ্চিত বলতে পারবো।”
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে জরুরি অফিসার ফোর্স এখানে আসে। এসে দেখতে পাই লাশটা পুকুরের প্রায় মাঝামাঝি ভাসছে। উদ্ধারের পর মারা গেছে না বেঁচে আছে এইটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কেন্দ্রে প্রেরণ করি। কর্তব্যরত ডাক্তার পরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন।”
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ডা. সুতাপা রায় বলেন, “শিক্ষার্থীর লাশ আমাদের কাছে আনা হয়। সাথে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ছিল। আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছি। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। আরও আগেই মারা গেছে। প্রাথমিক ধারণা সে পানিতে ডুবে মারা গেছে। ইন্টারনাল ইঞ্জুরি বা ব্লিডিং ছিল বলে দেখেছি। অন্য কোন কারণে মারা গেছে কি না তা খতিয়ে দেখতে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরপর জানা যাবে।”

Discussion about this post